বাংলাদেশ এক ভয়ঙ্কর অন্ধকারের দিকে এগোচ্ছে। যে দেশ দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন হয়েছিল, সেই দেশের মুক্তিযোদ্ধারা ও স্বাধীনতার পক্ষের নেতারা আজ নিজেদের স্বাধীন মাতৃভূমিতে অবরুদ্ধ, নিপীড়িত এবং নির্যাতিত। বর্তমানে দেশে চলছে অদৃশ্য ছদ্মবেশী শাসন যেখানে মানুষের বাকস্বাধীনতা কেড়ে নেওয়া হচ্ছে সত্য বলা অপরাধে পরিণত হচ্ছে।
শুক্রবার, ২৯ আগস্ট ২০২৫ এই দিনটি জাতির ইতিহাসে আরেকটি কালো অধ্যায় হয়ে থাকবে। দেশের প্রবীণ মুক্তিযোদ্ধা ও বুদ্ধিজীবীরা ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে একত্রিত হয়ে দেশের বর্তমান ভয়াবহ পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করতে চেয়েছিলেন। নেতৃত্বে ছিলেন, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের মূল প্রণেতা, বিশিষ্ট আইনজীবী ও রাজনীতিবিদ ড. কামাল হোসেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধের সময় বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর ছিলেন এবং স্বাধীনতার পর সংবিধান প্রণয়ন কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে বাংলাদেশের সংবিধানের খসড়া তৈরি করেছিলেন।
কিন্তু সভা শুরু হওয়ার আগেই ড. ইউনূসের সন্ত্রাসীরা মুক্তিযোদ্ধা ও নেতাদের ওপর হামলা চালায়। তাদের মারধর করে পুলিশে তুলে দেওয়া হয় এবং পরে মিথ্যা অভিযোগে মামলা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়।
আদালতের রায় ও অভিযুক্তদের তালিকাঃ এই ঘটনায় শুক্রবার (২৯ আগস্ট ২০২৫) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সারাহ ফারজানা আদালত থেকে সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী (৭৫) সহ মোট ১৬ জনকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। অভিযোগ আনা হয়েছে তারা নাকি দেশকে সশস্ত্র সংগ্রামের দিকে নিয়ে যাওয়ার ষড়যন্ত্র করেছেন এবং অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির পরিকল্পনা করেছেন।
গ্রেফতারকৃতদের নাম ও বয়সঃ আবদুল লতিফ সিদ্দিকী (৭৫) মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের প্রবীণ নেতা, সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী। আব্দুল্লাহ আল আমিন (৭৩) প্রবীণ রাজনীতিবিদ। শেখ হাফিজুর রহমান কার্জন (৫৫) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও বুদ্ধিজীবী। মঞ্জুরুল আলম (৪৯) সামাজিক কর্মী। কাজী এটিএম আনিসুর রহমান বুলবুল (৭২) মুক্তিযুদ্ধপন্থী নেতা। গোলাম মোস্তফা (৮১) মুক্তিযুদ্ধের প্রবীণ যোদ্ধা। মহিউল ইসলাম ওরফে বাবু (৬৪) রাজনৈতিক কর্মী। জাকির হোসেন (৭৪) প্রবীণ স্বাধীনতার পক্ষের কর্মী।
তৌছিফুল বারী খাঁন (৭২) মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রবীণ সমর্থক। আমির হোসেন সুমন (৩৭) তরুণ রাজনৈতিক কর্মী। আল আমিন (৪০) সামাজিক আন্দোলনকর্মী।
নাজমুল আহসান (৩৫) নতুন প্রজন্মের রাজনৈতিক কর্মী। সৈয়দ শাহেদ হাসান (৩৬) তরুণ প্রগতিশীল সংগঠক। শফিকুল ইসলাম দেলোয়ার (৬৪) মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কর্মী। দেওয়ান মোহম্মদ আলী (৫০) সামাজিক কর্মী। আব্দুল্লাহীল কাইয়ুম (৬১) রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব।
জাতির প্রতি হুঁশিয়ারিঃ এটা স্পষ্ট বাংলাদেশের বীর মুক্তিযোদ্ধা, প্রবীণ রাজনীতিবিদ এবং সংবিধানের রচয়িতা পর্যন্ত অপমানিত ও নিপীড়িত হচ্ছেন। মিথ্যা মামলা, জেল-জুলুম, হামলা-মারধরের মধ্য দিয়ে দেশে আবারও পাকিস্তানি শাসনের প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠছে।
জাতিকে এখন সিদ্ধান্ত নিতে হবে আমরা কি আবারও অন্ধকারে ফিরব, নাকি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দাঁড়িয়ে সত্য, ন্যায় ও গণতন্ত্রের পথে এগোব? অদৃশ্য শাসনের বিরুদ্ধে একসাথে রুখে দাঁড়াতে হবে। একথা ভুলে গেলে চলবে না, বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল মানুষের অধিকার, গণতন্ত্র ও ন্যায়বিচারের জন্য কোনো অদৃশ্য শক্তির দমননীতি কায়েম করার জন্য নয়।